দোয়া মুমিনের অন্যতম অবলম্বন। দোয়া করলে আল্লাহ খুশি হন। আল্লাহর কাছে না চাইলে তিনি অসন্তুষ্ট হন। এ জন্য রাসুলুল্লাহ দোয়াকে ইবাদতের মগজ বলেছেন। পবিত্র কোরআনে নবী-রাসুলদের বিভিন্ন দোয়া উদ্ধৃত হয়েছে। এসব দোয়া একদিকে প্রার্থনা সম্পর্কে সচেতন করে, অন্যদিকে দোয়ার শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়।

নিম্নে দোয়াগুলো উদ্ধৃত করা হলো—

১. আদম (আ.) : তিনি বলেন, ‘হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তাহলে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৩)

২. ইউনুস (আ.) : ইউনুস (আ.)-এর দোয়া সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, তিনি বলেন, ‘আপনি (আল্লাহ) ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র ও মহান, আমি তো সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৭)

৩. মুসা (আ.) : পবিত্র কোরআনে মুসা (আ.)-এর একাধিক দোয়া বর্ণিত হয়েছে। যেমন—

ক. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ১৬)

খ. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ২১)

৪. সোলায়মান (আ.) : কোরআনে বর্ণিত সোলায়মান (আ.)-এর দুটি দোয়া হলো—

ক. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি—আমার প্রতি ও আমার মা-বাবার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য। আর আমি যেন সৎকাজ করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন। আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সত্কর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’ (সুরা নামল, আয়াত : ১৯)

খ. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ যেন না হয়। আপনি তো পরম দাতা।’ (সুরা সাদ, আয়াত : ৩৫)

৫. জাকারিয়া (আ.) : তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৯)

৬. আইয়ুব (আ.) : তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩)

৭. নুহ (আ.) : নুহ (আ.)-এর একাধিক দোয়া কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। যেমন—

ক. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে সাহায্য করুন ওই বিষয়ে, যে বিষয়ে তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ২৬)

খ. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে যাতে আপনাকে অনুরোধ না করি—এ জন্য আমি আপনার আশ্রয় চাই। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা করেন এবং আমাকে দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৪৭)

৮. শোয়াইব (আ.) : তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দিন এবং আপনিই শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৯০)

৯. ইবরাহিম (আ.) : কোরআনে ইবরাহিম (আ.)-এর একাধিক দোয়া বর্ণিত হয়েছে। যেমন—

ক. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! এই নগরীকে নিরাপদ করুন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের প্রতিমাপূজা থেকে দূরে রাখুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৩৫)

খ. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে এক সত্কর্মপরায়ণ সন্তান দান করুন।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০)

১০. দাউদ (আ.) : তিনি বলেন, ‘হে আমাদের রব! আমাদের ধৈর্য দান করুন। আমাদের পা অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫০)

১১. লুত (আ.) : কোরআনে বর্ণিত তাঁর দুটি দোয়া হলো—

ক. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে এবং আমার পরিবার-পরিজনকে তারা যা করে তা থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ১৬৯)

খ. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৩০)

১২. ইয়াকুব (আ.) : তিনি বলেন, ‘আমি আমার অসহনীয় বেদনা, আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর কাছে নিবেদন করছি।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৮৬)

১২. ইউসুফ (আ.) : তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা! আপনিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে সত্কর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১০১)

১৩. ঈসা (আ.) : কোরআনে বর্ণিত তাঁর দুটি দোয়া হলো—

ক. তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের রব! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন। এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য হবে আনন্দোৎসবস্বরূপ এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন। আর আমাদের জীবিকা দান করুন; আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১১৪)

খ. তিনি বলেন, ‘আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন, তাহলে তারা তো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদের ক্ষমা করেন, তাহলে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১১৮)

১৪. মুহাম্মদ (সা.) : মহানবী (সা.)-এর অসংখ্য দোয়া কোরআনে স্থান পেয়েছে। এর কয়েকটি হলো—

ক. তিনি বলেন, ‘হে আমাদের রব! আমাদের পৃথিবীতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদের রক্ষা করুন জাহান্নামের শাস্তি থেকে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০১)

খ. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে প্রবেশ করান কল্যাণের সঙ্গে এবং আমাকে বের করে আনুন কল্যাণের সঙ্গে। আপনার কাছ থেকে আমাকে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮০)

গ. তিনি বলেন, ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে অবিচারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন না।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৯৪)

আল্লাহ সবাইকে বিনীত প্রার্থনার তাওফিক দিন। আমিন।